নবম-দশম শ্রেণি বাংলা ২০২৫ । বঙ্গবাণী : আবদুল হাকিম
এই ভিডিওতে আমি 'বঙ্গবাণী' কবিতার প্রতিটি লাইন সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছি, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি এবং নবম শ্রেণির বাংলা ২০২৫ সালের নতুন বই অনুযায়ী বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছি।" 😊📖🎬
বঙ্গবাণী
- আবদুল হাকিম
কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস ।
সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ ॥
তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।
নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন ৷
আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ ।
দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ ॥
আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত ।
যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত ॥
যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন ॥
সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী ।
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী ॥
মারফত ভেদে যার নাহিক গমন ।
হিন্দুর অক্ষরে হিংসে সে সবের গণ ॥
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী ।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ॥
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায় ।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায় ॥
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি ॥
প্রতিটি লাইন সহজ ভাষায় লিখিত ব্যাখ্যা
"কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।" ➡ যার বই পড়ার অভ্যাস নেই।
"সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ॥" ➡ তারা আমাকে তাদের ইচ্ছার কথা জানাল।
"তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।" ➡ তাই আমি বাংলায় এই গ্রন্থ রচনা করলাম।
"নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।" ➡ আমি নিজের পরিশ্রম দিয়ে সবার উপকার করতে চাইলাম।
🔹 সারমর্ম:
যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই, তারা আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আমি বাংলায় এই রচনা তৈরি করলাম, যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে।
"আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।" ➡ আরবি ও ফারসি গ্রন্থ পড়ার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি নেই।
"দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ॥" ➡ কিন্তু যদি দেশীয় ভাষায় (বাংলায়) লেখা হয়, তখন অনেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
"আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।" ➡ আরবি, ফারসি ও হিন্দিতে লিখলে কেউ কোনো আপত্তি করে না।
"যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত॥" ➡ অথচ যদি বাংলায় আল্লাহ ও নবীর প্রশংসা করা হয়, তখন অনেকেই বিরোধিতা করে।
🔹 সারমর্ম:
কবি আবদুল হাকিম এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আরবি ও ফারসি ভাষায় ধর্মীয় বিষয় লেখা হলে কেউ আপত্তি করে না, কিন্তু যদি বাংলায় লেখা হয়, তখন অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। তিনি এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলেছেন।
"যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।" ➡ যে দেশে যে ভাষায় মানুষ কথা বলে,
"সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন॥" ➡ সৃষ্টিকর্তা (প্রভু) সেই ভাষাই বুঝতে পারেন।
"সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।" ➡ তিনি সব ভাষাই বোঝেন, তা হিন্দুর ভাষা হোক বা অন্য কিছু।
"বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী॥" ➡ বাংলা ভাষাই হোক বা অন্য যে কোনো ভাষা, সবই তিনি বোঝেন।
🔹 সারমর্ম:
কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে সৃষ্টিকর্তা কোনো নির্দিষ্ট ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। তিনি সব ভাষার কথাই বোঝেন, তাই বাংলা ভাষায় ধর্মীয় রচনা লেখায় কোনো দোষ নেই।
"মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।" ➡ যাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান নেই (যারা সত্য উপলব্ধি করতে পারে না)।
"হিন্দুর অক্ষরে হিংসে সে সবের গণ॥" ➡ তারা হিন্দুদের লিপি (বাংলা ভাষা) নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে।
"যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।" ➡ যারা বাংলায় জন্ম নিয়ে বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে,
"সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥" ➡ তারা আসলে কোন জাতের বা কাদের বংশধর, তা আমি জানি না।
🔹 সারমর্ম:
কবি আবদুল হাকিম এখানে বলতে চেয়েছেন যে, যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে, তারা আত্মিক জ্ঞানহীন এবং তাদের পরিচয় নিয়েই সন্দেহ হয়। বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা মানে নিজের দেশ ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করা।
"দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।" ➡ যার নিজের মাতৃভাষার জ্ঞান ও শিক্ষা ভালো লাগে না,
"নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়॥" ➡ সে কেন নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যায় না?
"মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।" ➡ তার পূর্বপুরুষ (মা-বাবা, দাদা-নানা) এই বাংলাতেই বাস করেছেন,
"দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি॥" ➡ তাই মাতৃভাষার জ্ঞান ও উপদেশ গ্রহণ করাই সবচেয়ে কল্যাণকর।
🔹 সারমর্ম:
কবি আবদুল হাকিম এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, যারা বাংলা ভাষাকে অবহেলা করে, তারা যেন নিজের দেশ ছেড়ে চলে যায়। কারণ তাদের পূর্বপুরুষও এই দেশেই ছিলেন, তাই বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান দেখানো উচিত।
No comments